Translate

Thursday, August 27, 2020

কবীর লাইব্রেরী প্রদর্শন- ময়মনসিংহ গাঙ্গিনারপার। সেবা প্রকাশনীর বই পড়ার স্মৃতি।

 


স্কুল লাইফে (১৯৮৬-১৯৯৮) সেবা প্রকাশনীর বই পড়ে নাই এরকম কোন বাংলাদেশী নাই। তুমুল জনপ্রিয় সেবা প্রকাশনীর বই কিনে পড়ার জন্য বহু ধরনের কসরত করতে হইতো। যেমন ধরেন- বাসা থেকে ২/৫/১০ টাকা নেয়া বা ধার করা বা বাজারের টাকা থেকে মেরে দেওয়া (না মেরে বেশীর ভাগ সময়েই বলেই নেয়া) , নিউজপ্রিন্ট কিনার আগে সেইভ করার চেষ্টা করা, হোয়াইট প্রিন্ট কেনার আগে চেষ্টা করা, বই কেনার আগে সেভ করার চেষ্টা করা বা কলম কেনার আগে সেভ করার চেষ্টা করা) বা যে কোন উপায়ে যে কারো কাছ থেকে চেয়ে হোক বা না হোক সেবা প্রকাশনীর নিত্য নিয়মিত বই কেনার জন্য ১৮-২০ টাকা জমানোর ব্যাপারে অলওয়েজ এলার্ট থাকা। বই কিনে একবার পড়ে আরেকজনের কাছে সেল করে দেওয়া বা কয়েকজন মিলে একসাথে ২ টাকা করে তুলে একটা বই কিনে সেটা ২/৩ দিনে প্রত্যেকে ৩ ঘন্টার সময় করে পড়া ছিলো একটা সাংঘাতিক ব্যাপার। প্রথমবার পড়ে তেমন কিছু বোঝা না গেলেও পরে সেইটা আবার যারা ২ টাকা করে দিতো তারা পড়া শেষ করলে পড়ার সুযোগ পাওয়া যাইতো। তবে একটা বই পড়ে ফেললে সেটা আর নতুন করে পড়ার মতো কিছু থাকতো না। কোনোদিন যদি  নাই পাওয়া যাইতো সেদিন পুরাতন বই এর দরকার হইতো । সেবা প্রকাশনীর সবচেয়ে বেশী বই ছিলো- মার্ক টোয়েন পাঠাগার নামের একটা পাঠাগারে- যেটা ছিলো লিখন নামের এক বড় ভাই এর। সেবা প্রকাশনীর তিন গোয়েন্দা বই পড়ার জন্য টিফিন খাওয়া হতো না তেমন। টিফিনের টাকা অলওয়েজ বাচাইয়া রাখতাম। আবাসিক এলাকার ভেতরে স্কুল হবার কারনে টিফিন টাইমে বাসাতে চলে আসতে পারতাম কিন্তু তারপরেও টিফিনের জন্য একটা এক্সট্রা টাকা পাইতাম। মাঝে মাঝে কনফিউশন তৈরী হতো ২ টাকা দিয়ে সেবা প্রকাশনীর বই কেনার জন্য সিরিয়াল হবো নাকি একটা গোল্ড লীফ কিনে একা একা সেটা ধ্বংস করবো। দুইটাই করতাম মাঝে মাঝে। আরো যাদের কাছ থেকে বই নিতাম তার মধ্যে ছিলো বেষ্ট ওয়েষ্টার্ন কালেকশন - ১ বছর সিনিয়র দানব আজিম এর কাছ থেকে- তার কাছে যদি রাত্রি ২ টা র পরেও যাইতাম তবু সে বই দিতো। তার কন্ডিশন বই সম্পূর্ন অক্ষত অবস্থায় ফিরত দিতে হবে- কোন কাটা ছেড়া হইলে জরিমানা আর তার পরবর্তী বই বের হবার সাথে সাথে জানান দিতে হবে সেবা প্রকাশণীর বই কখন বের হবে তার জন্য সবসময় চোখ রাখতে হতো সংবাদ বা ইত্তেফাক বা সেই সময়কার যে কোন জনপ্রিয় পত্রিকাতে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত কামাল রনজিত মার্কেটে (তখন নাম ছিলো কো অপারেটিভ মার্কেট) একটাই পেপারের দোকান ছিলো যেটাকে পত্রিকার দোকান বলা হতো- এখনো আছে। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মেধাবী ছাত্র কামাল এবং রনজিত কে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয় যেখানে আমরা সিগারেট কিনতে যাইয়া সিগারেটের দোকানে সিগারেট ধরাইতে যাইয়া দূরে দাড়িয়ে থেকে বুঝতে পারি (আমি দাড়াইয়া ছিলাম শাহাবুদ্দিন ভাই এর সিগারেটের দোকানের সামনে আর গোলা গুলি টা হয়েছিলো ৫০ মিটার পূর্ব দিকে তখন কার দিনে একটা চা পুরি সিংগারার দোকানে)- মনে হয়েছিলো একজন মহিলার মতো দেখতে নিজ হাতে গুলি করে মাইরা ফেলাইছে - পরে আবার ভাবলাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকাতে অপরিচিত  মহিলা আসবে কোথা থেকে - হয়তো ভুল দেখেছি) কিন্তু বাস্তাবে তার কোন প্রমান নাই- তাৎক্ষনিক ভাবে মেধাবী কামাল এবং রনজিত মারা যাবার কারনেই শ্রদ্বাবশত কো অপারেটিভ মার্কেটের নাম পরিবর্তন করে মার্কেটের নাম রাখা হয় শহীদ কামাল রনজিত মার্কেট। লাইফে আরেকটা ক্রস ফায়ার দেখেছিলাম ২০০৬ সালে বর্তমান মহাখালী ফ্লাইওভার এর কাছে। হেটে হেটে যাইতেছিলাম কাকলীর মোড়ের দিকে- মহাখালী রেলক্রসিং পার হয়ে লেফট সাইডের রান ওয়ে ধরে হেটে হেটে বনানী কাকলীর মোড় পর্যন্ত যাওয়া আমার একটা ভালো হেভিট ছিলো- তো একদনি মহাখালী রেল ক্রসিং পার হতেই লেফট সাইডের আইল্যান্ডে উঠার সাথে সাথেই দেখলাম ২ জন স্পেশাল ব্রাঞ্চ অফিসার - হাতে থ্রি নট থ্রি এবং কাটা রাইফেল বা শর্টগান নিয়ে দাড়িয়ে আছে- আমাকে বলতাছে এ্খানেই দাড়িয়ে থাকেন। তো আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি হইতাছে। বলতাছে মহাখালী কাচাবাজারের ভেতরে একজন সন্ত্রাসীকে ক্রসফায়ার করা হবে। পরে তাকিয়ে দেখি মহাখালী কাচাবাজারের ভেতর আরো কিছু এসবি অফিসার দাড়াইয়া আছে। পরে একটা মুভমেন্ট দেখলাম এবং গোলা গুলি হলো এবং বললো যে সেই সন্ত্রাসী ক্রসফায়ার হয়েছে এবং পরে এসবি অফিসার বললো এখন চলে যান। পরে আমি চলে গেলাম হেটে হেটে কাকলীর দিকে। বড়ই ভয়াবহ ব্যাপার। 

Early to bed, early to rise- Makes a man healthy, wealthy and wise- এই নিয়মনীতি অনুযায়ী সকালে প্রতিদিন গুম থেকে উঠে মসজিদে যাইয়া ফজরের নামাজ পড়তাম। তারপরে বাসাতে ফিরে চা এবং হালকা ২/১ টা বিস্কুট নিয়ে পড়ার টেবিলে বসতাম। তারপরে ২ ঘন্টার মতো সব কিছু রেডি করতাম স্কুলের জন্য। তারপরে নাস্তা করতাম- গরম গরম রুটি এবং ভাজি/ডাল/ডিম/ সেমাই- যখন যেটা বানানো হতো। তারপরে যাইতাম বাজারে- ছোটবেলাতে আমার কাচাবাজার করার অভ্যাস ছিলো। কাচাবাজার করে চলে যাইতাম পত্রিকার দোকানে-পত্রিকাটা হাতে নিয়ে বাসাতে চলে আসা। আর কোনদিন যদি সকালে বাজার না করা লাগতো তাহলে দৌড় দিয়ে বাজারে আইসা পত্রিকাটা নিয়ে চলে আসতাম। এক দৌড়ে যাইতাম ১ কিলোমিটার তারপরে আবার আরেক দৌড়ে ফিরে আসতাম বাসাতে। মাঝে মাঝে সাইকেল নিয়েও যাইতাম এবং নিয়ে আসতাম। মাঝে মাঝে আব্বাও ঘুম থেকে তুলে সাইকেলের চাবি হাতে দিয়ে বলতো যাও তো দৌড়াইয়া যাও- পেপারটা নিয়ে আসো। পেপারটা পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে যাবো (আমি নিজেও একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বাবার নেয়া ক্লাস করেছিলাম- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা ধরে নিয়ে গেছিলো মজা করার জন্য আর বলেছিলো দেখো তোমার বাবা কি সুন্দর ক্লাস নেয়- একদিন দেশের সবাইকে বলতে পারবা, ছোট ছিলাম বরে একটু উসখুস করলেও ক্লাসের শেস পর্যন্ত ছিলাম। তবে আমার বাবার প্রিয় চিলো সয়েল ফিজিক্স এবং সয়েল কেমিষ্ট্রি নিয়ে খাতা দেখা, পরিক্ষক, পর্যবেক্ষক হওয়া, এক্সটারনাল হওয়া সারা দেশের বিবিন্ন কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর মাঝে মাঝে দীর্ঘ সময় নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েল খাতা মূল্যায়ন করে আমাকে দিতেন নাম্বার যোগ করতে)। সেদিন পত্রিকা আর উল্টাইয়া দেখতাম না কারন আব্বা খুব পছন্দ করে পত্রিকার নতুন মোড়ক টা খুলতে- কিন্তু এই ধরনের খবর গুলো সম্ভবত পড়তো না- আমি পড়তাম- সে সময় কার পত্রিকা র প্রধান শিরোনাম বিএনপি- আওয়ামী লীগ- জামায়েতে ইসলাম- হত্যা, খুন, ধর্ষন, কিশোরী ধর্ষন, মাথা কাটা দেহ, গ্রামে ক্ষেতের পাশে ধড় বিহীন লাশ, ধর্ষিতা নারীর ক্ষত বিক্ষত লাশ এবং জবাই করা দেহ, রগ কাইটা ফেলানো দেহ, গোলাগুলি, ছাত্রদল এবং ছাত্রলীগের লাশের মিছিল এবং লাশের রাজনীতি। আমি মাঝে মাঝে বসে বসে গুনতাম যে পত্রিকাতে কয়টা লাশের বা মৃত্যুর খবর দেয়া আছে। পরে সংখ্যাটা মনে রাখতাম যে হয়তো একদিন এমন দিন আসবে যে সারা বাংলায় হত্যা, ঘুম , খুন, ধর্ষন একেবারে কমে যাবে। সেই আশাতে এমন ই গুড়েবালি যে- শাহবাগ গনজাগরনের পরে এক পত্রিকাতে দেখলাম যেখানে দৈনিক মৃত্যুর হার ছিলো (খুন খারাপি রেষারেষি)- ১৫০ এর মতো সেখানে সেটা বেড়ে দাড়িয়েছে ৪৫০+। বর্তমানে করোনার কারনে রাস্তা ঘাটে রোড একসিডেন্ট, রাজনৈতিক কারনে হত্যা, খুন এবং ধর্ষন স্লাইট কমেছে। সম্ভবত ১৯৯৪ বা তার আশে পাশেকার সময়ে- সালে আমাদের প্রিয় বন্ধু কাম বড় ভাই গাজীকে (ময়মনসিংহের লোকাল /স্থানীয়) মাঝ রাতে ডেকে কাইট্যা পিছ পিছ করে বস্তাতে ভরে ব্রক্ষপুত্র নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো- পরে সেটা লোকাল পুলিশ তুলে এনেছিলো এবং কবর বা দাফনের ব্যবস্থা করেছিলো)। সেটার বিচার বলে আজো হয় নাই শুনেছি। তারপরে কয়েক বছর পরে আরো একটা কাহিণী খুব নাড়া দেয় মনে- বিটিভির তালিকাভুক্ত ফ্যাশন মডেল ও শিল্পী তিন্নীকে হত্যা করে বুড়িগংগা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিলো। জানি না তার হত্যাকান্ডের বিচার আজো হয়েছে কিনা?




বিচার একদনি হবেই হবে- ইহকালে না হইলেও পরকালে হইলেও হবে। ৪৩ বছর পরে শাহবাগ গনজাগরনের আন্দোলনের মাধ্যমে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী কে রাজাকার প্রমান করে ফাসিতে ঝুলাইয়া দেয়া হইছে। আরো অনেক রাজাকারদের ফাসি হইতাছে বা কার্যকর হইতাছে। শাহবাগ গনজাগরনের আন্দোলনের মাধ্যমে রাজাকারদের ফাসির আদেশের মাধ্যমে আমার মনে একটা শান্তি পাইছি যে- এতোদিন যাবত (১৯৭২ থেকে= আমার ক্ষেত্রে ১৯৯০ থেকে) বাংলায় যে হত্যা, খুন, জখম হইতেছিলো তার একটা প্রতিশোধ নেওয়া দরকার ছিলো - প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর ফাসির কার্যকরের মাধ্যমে সেই রকম একটা শান্তি পাওয়া গেছিলো। সম্ভবত আরো শান্তি সামনে অপেক্ষা করতাছে।

পাশের বিল্ডিং এ এক সুন্দরী বড় বোন ছিলো যিনি শুধূ হুমায়ুন আহমেদের বই কালেকশন করতো। মাঝে মাঝে যদি বই চাইতাম তবে দিতো আর না পারলে অনেক সময় উনার ছোট বোনের কাছ থেকে নিতে বলতো। উনি মেধাবী ছাত্রী ছিলেণ। হুমায়ুন আহমেদের বইগুলো তখনকার সময়ে দামী হবার কারনে বই এর মোড়ক খুলে পড়তে হইতো এবং পরে আবার মোড়ক ওকে করে ফেরত দিতে হতো। এর মাঝে যদি উনার সেবা প্রকাশনীর কোন বই লাগতো বা যদি চাইতো  তাহলে আমিও জোগাড় করে দিয়ে আসতাম। হুমায়ুন আহমেদকে আমি সরাসরি দেখেছি কয়েকবার- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিধ্যালয় আবাসিক এলাকা শিক্ষক ক্লা্বে বইসা আড্ডা দিতেন। তখণ আমি ছোট ছিলাম। উনি আগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বব্যিধালয়ের শিক্ষক ছিলেন বলে শুনেছি- এগ্রো কেমিষ্টি্র পরে ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ের কেমিষ্ট্রির শিক্ষক হোন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পাবলিক লাইব্রেরী সেটা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিলো- সেখানে পেপার পত্রিকা সব ধরনের ম্যাগাজিন প্রচুর পরিমানে বিদেশী বই এবং সেবা সহ  অন্যান্য    প্রকাশনীর ভালো বই ও পাওয়া যাইতো- আর লোক সমাগম ও হইতো ভালো। 

কবীর লাইব্রেরী ছিলো সেই রকম একটা লাইব্রেরী যেখানে সবসময় সেবা প্রকাশনীর বই পাওয়া যাইতো। বাকৃবি আবাসিক এলাকা থেকে সেই খানে যাওয়ার জণ্য উপায়- ১) বহুত কষ্ট করে ৪ কিলোমিটার হেটে যাওয়া, ২) টেম্পোতে করে যাওয়া ভাড়া ছিলো ২ টাকা- যাইতে আসতে ৪ টাকা ৩) একটা দুই চাকার সাইকেল ম্যানেজ করে যাওয়া এবং বই কিনে ফেরত আসা। ২/৩ দিন আগে কবীর লাইব্রেরীতে গেছিলাম- তখন এই স্মৃতিচারন গুলো করলাম। তখন কার সময়ে ময়মনসিংহ শহরের অনেক বড় ভাই অনেক ক্ষেপে যেতো যে তোরা এতো বই পড়স কখন আর বড় ভাইরা প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা শহরে যাইতো কারওয়ান বাজারে মনে হয় সেবা প্রকাশনীর মেইন শো রুম ছিলো। এখন কবীর লাইব্রেরী দেখতে অনেক সুন্দর হয়েছে। ময়মনিসংহ সিটি কর্পোরেমনের প্রানকেন্দ্রে - গাঙ্গিনারপাড়ে ছিলো সেই শো রুম - এখনো আছে একই খানে। আমার মনে আছে সেবা প্রকাশনীর  ক্লাসিক/থ্রিলার/ প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য/ তিন গোয়েন্দা/ মাসুদ রানা/ওয়েস্টার্ন মিলে প্রায় ১০০০ + বই পড়েছি। একসময় হুমায়নু আহমেদের সকল বইও পড়া ছিলো- হিমু এবং মিছির আলি ক্যারেক্টার বলতে গেলে একদম চোখের সামনে তৈরী হয়েছে। বই পড়া যে একটা নেশা ছিলো তা ইন্টারনেটে আসার পরে ভুলে গেছি।যেদিন থেকে ইন্টারনেটে বাংলাদেশে প্রবেশ করলো সেদিন থেকে আমার বই পড়া গায়েব হয়ে গেলো। কলকাতার কয়েকজন লেখকের সব বই আমার পড়া ছিলো- সমরেশ মজুমদার, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং আরো কিছু লেখক- যাদের নাম এখন আর মনে আসতাছে না। আব্বা অনেকদিন শিক্ষা ছুটিতে ইউএসএ, ইউরোপ, মালয়েশিয়া থাকার কারনে ১৯৯০-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত  আমি একটা ভয়াবহ সুযোগ পাই গল্পের বই পড়ার। তখন বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম বিটিভি, ভিসিআর এ মুভি দেখা, ডেক সেট বা ওয়াক ম্যানে গান শোনা এবং গল্পের বই পড়া। অনেক  সময় স্যারেরাও বলতো যে- বই পড়ে সময় কাটা- বাহিরে যাস না। কিছু স্কুল কলেজের শিক্ষক ছিলো আমাদের কাছে বই এক্সচেন্জ করতো বা চাইতো। বন্ধুর মতো সেই সকল স্যারেরা এখন আর তেমন চোখের সামনে পড়ে না তবুও তাদের প্রতি অনেক শ্রদ্বা। 

সম্পূর্ন আবাসিক এলাকার স্কুল এবং কলেজে পড়ালেখা করার কারনে অনেক সময় বাহিরের ছেলে পেলেদেরে সাথে কথা বলতে গেলে  তারা বলতো তোরা বই পড়ার সময় পাস কেমনে- আমরা বের করে নিতাম। যে কোন খানে দাড়িয়ে বা বসে দুই ঘন্টা সময় ব্যায় করে একটা বই যদি পড়তে না পারতো কেউ তবে তাকে ডাকা হতো ব্যাক বেঞ্চার হিসাবে। আমি প্রথমে পারতাম না দুই ঘন্টায় শেষ করতে কিন্তু পরে আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে গেছিলো। একটা দিনে স্কুলে ক্লাস থাকতো ৫-৬ টা , ৪৫ মিনিট করে- এর মাঝে একটা নতুন সেবা প্রকাশনীর বই পড়তো মিনিমাম ২/৩ জন ক্লাসে বসে থেকেই। আর মাঝে মাঝে ক্লাস থেকৈ বের হয়ে ব্রক্ষপুত্র নদীর পাড়ে বই পড়তে যাইয়া অনেক অনেক ছাত্র ছাত্রী স্কুলের টিচার বা বাবা মায়ের কাছে ধরা খাইতো। অনেক সময় অনেককে দেখেছি সকালে রওনা হয়ে ঢাকাতে ডুকে সেবা প্রকাশনীর বই কিনে বিকালে ক্লাস শেষ হবার আগেই ময়মনসিংহে ফিরে এসে বই টা পড়ে রাতেই হ্যান্ড ওভার করে দিতো। ৩৫ টাকা ভাড়া ছিলো ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাতে- ছাড়তো বাঘমারা কলেজ গেইট রেল ক্রস থেকে । মহাখালী থেকে ২ টাকা ভাড়া কারওয়ান বাজার- বই এর দাম ১৮/২০/২২ টাকা এবং গোল্ড লীফ সিগারেটের দাম ২টাকা । সব মিলে ১০০ টাকা ম্যানেজ করে বাসা থেকে ঢাকাতে যাইয়া আবার ফিরে আসা যাইতো এবং সাথে সেবা প্রকাশনীর ১ বা দুইটা বই। শুনেছি সেবা প্রকাশনীর যারা ডিষ্ট্রিবিউটর তারা যদি শুনতো যে স্কুল ড্রেস পড়ে ময়মনসিংহ থেকে বই কিনতে ঢাকা এসেছে তখন ১ টা বই এক্সট্রা গিফট  ও করে দিতো। 

বই একটা সামাজিক বন্ধন তৈরী করতো। বই পড়ার নেশা এক দুর্দান্ত নেশা। পাঠ্য বইয়ের পরেও যে বই পড়ে অনকে জ্ঞান আরোহন করা যায় তা ছোটবেলাতেই টের পাইতাম। আর সেই সকল বইয়ের উপরে কতো যে মুভি বা সিনেমা দেখেছি তার কোন ইয়ত্তা নাই। কেউ যদি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিধ্যালয় আবাসিক এলাকা আমার কাছে কি কারনে স্মরনীয়- তো আমি বলবো বই পড়ার জণ্য। মাঝ রাতে টর্চ জালিয়ে বিছানাতে শূয়ে কাথা মুড়ি বা লেপ মুড়ি দিয়ে থ্রিলার বই পড়া আর  শিমুল গাছের ণীচে থাকা আমার বাবার সরকারি কোয়ার্টারের বাসার ভেতর দিয়ে একরুম থেকে আরকে রুমে যাবার মতো বা বাহিরের বাথরুমে যাবার সাহস করা এক বিশাল ব্যাপার ছিলো। গায়ে কাপন দিতো- মাঝে মাঝে ভাবতাম  এই বুঝি জীন পরীর সাথে দেখা হইলো। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিধ্যালয় আবাসিক এলাকার বাসা ছেড়ে দিতে হয়- কোন এক কারনেতৎকালীন সরকার বাসা ভাড়া সব মিলিয়ে প্রায় অনেক চাইয়া বসে- তখন আমরা তড়ি ঘড়ি করে ৫ তালা ফাউন্ডেশন দিয়ে একটা বিল্ডিং এর কাজ শুরু করে এক তালা করে পার্শবর্তী এলাকাতে বর্তমানে ২০ নং ওয়ার্ডে পূর্বে কিনে রাখা জমিতে বাড়ি করে ফেলি এবং স্থানান্তর হয়ে যাই। ১৯৯৯ সাল থেকে সিলেট সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে ক্লাস শুরু হয়ে যায় এবং সেখানে হলে বসে এইচবিও, ষ্টার ‍মুভিজ  এ ডুবে যাইতাম এবং অনেক সময় ধরে মুভি দেখতে অনেক ভালো লাগতো এবং এক সময় নেশা ধরে যায় যা পরবর্তীতে ডেস্কটপ, মাঠের মধ্যে মুভি স্ক্রিন, প্রজেক্টের মেক করে মুভি দেখা, সিডি ডিভিডি তে মুভি দেখা  এবং অনলাইনে মুভি দেখা, ইউটিউবে মুভি দেখা এবং এফটিপি সার্ভার তৈরী করে মুভি দেখা এইগুলো নিয়ে আরকেদিন লিখবো। তবে বই পড়ার অভ্যাস টা আমি আর কখনোই গড়ে তুলতে পারি নাই। আজো এখনো বই পড়তে পারি না। পড়তে গেলে এক ধরনের নষ্টাল জিয়ায় আক্রান্ত হই। গতকাল একটা নাটক দেখলাম অহনার - গ্রামের মধ্যে পাঠাগার গড়ে তোলা নিয়ে একটা নাটক দেখে এই অনেক গুলো কথা মনে পড়লো এবং শেয়ার করে ফেলাইলাম। 

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment. After review it will be publish on our website.

#masudbcl