Translate

Wednesday, August 26, 2020

ফ্রি ল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশ নিয়ে অভিজ্ঞতা।

যারা আউটসোর্সিং এবং মার্কেটপ্লেস নিয়ে কাজ করেন তাদের অনেকেই অনেক সময় অনেক ধরনের ক্লায়েন্টকে বাংলাদেশ চিনাতে নিয়ে বেগ পেতে হয়েছে কিনা জানি না তবে আমি অনেক সময় অনেক ক্লায়েন্ট কে বাংলাদেশ চিনাতে নিয়ে বেশ বেগ পেয়েছি ২০১০ সালের আগে পর্যন্ত। একবার কাজ করতেছিলাম অনেক গভীর রাতে এক ক্লায়েন্টের দেয়া কিছু কাজ- হঠাৎ করে একজন ইংরেজের সাথে কথা স্কাইপেতে। আগে প্রতিযোগতিা কম ছিলো যার ফলে কাজ পাইতে সহজ হইতো। কিন্তু এখন এতো পরিমান ফাইট লেগে যায় কাজ নিয়ে - মাঝে মাঝে ভয় লাগে যে বাস্তব জীবনে হয়তো বা কিছু ঘটে যাবে। তাছাড়া মার্কেটপ্লেসের কাজ থেকে এফিলিয়েট মার্কেটিং টা অনেক বেশী স্বাধীনতা দেয় কাজের ক্ষেত্রে এবং উপার্জনের ক্ষেত্রেও। তাই মার্কেটপ্লেসে কাজ করা কমাইয়া দিয়া এফিলিয়েট মার্কেটিং এ মনোনেবিশ করা খুবই প্রয়োজন বলে মনে করলাম। মার্কেটপ্লেসে কাজের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের হাজারো প্যারা নিতে হয়- বার বার বলবে এইটা হয় নাই- সেইটা হয় নাই। আরো কাজ রিজেক্ট করে দেবার অপশন ও আছে। আবার অনেক সময় কাজের পেমেন্ট না দিয়ে চলে যায়। আবার অনেক সময় ব্যাড রিভিউ দিয়েও চলে যায়।কয়েক বছল খাইটা একটা প্রোফাইল তৈরী করলাম- একজন আইসা টঠাৎ করে একটা ব্যাড রিভিউ দিয়ে প্রোফাইলের ভ্যালূ টা কমাইয়া দিতে পারে। চাইলে আমিও বাংলাদেশ থেকে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে একটা মার্কেটপ্লেস বায়ার/ক্লায়েন্ট একাউন্ট তৈরী করে সুন্দরী একটা মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল ও করা যাবে তার প্রোফাইরে ব্যাড রিভিউ দেবার কথা বলে এবং চাইলে অনেক ধরনের ফ্যাসিলিটজ ও আদায় করা যাবে। যারা প্রাত্যহিক জীবনে সব ধরনের মানুষের সাথে চলাফেরা করে অভ্যস্ত তাদের জন্য মার্কেটপ্লেস এ কাজ করা সহজ। কারন এইখানে নানান দেশের নানান ধরনের বায়ার বা ক্লায়েন্টরা আসে আর নানান দেশের নানান ধরনের ক্লায়েন্টের মেন্টালিটি বুঝে কাজ করতে হয়- এককথায় সফলতা টা এইখানে অনেকটাই প্রাত্যহিক ডিলিংস এর মতো। আপনি যদি সোসাইটি তে সব ধরনের মানুষের সাথে নেগোশিয়েট না করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য মার্কেটপ্লেসে কাজ করা বা টিকে থাকাটা টাফ হয়ে দাড়াবে কারন একেক দেশের ক্লায়েন্টের কাজ দেবার ধরন একেক রকম। তো সেই কথায় আসি- ইংরেজ ক্লায়েন্ট আমাকে বলতাছে তুমি কোথায় থাকো? তো আমি উত্তর দিলাম - বাংলাদেশে। তখনো গগুল ম্যাপ বা আরো কিছু আইডেন্টিফিকেশন সিষ্টেম পুরোপুরি লাঞ্চে যায় নাই ফলে ক্লায়েন্ট বাংলাদেশ খুজে না পেয়ে আবারো জিজ্ঞাসা করলো আমি কোথায় থাকি? তো আমি উত্তর দিলাম- বাংলাদেশ । সে স্কাইপেতে আমার ফুল ডিটেইলস দেখে বললো- আমি ইন্ডিয়াতে থাকি? আমি আবারো বোঝানোর চেষ্টা করলাম- সে বললো তুমি ইন্ডিয়ার কাছে থাকো। বাংলা এলাকাতে আগে ছিলো ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। তারপরে বললো আমি কিভাবে পেমেন্ট নেবো কাজের জন্য- তো বললাম ডলারে। পরে বুঝতে পারলাম যে ক্লায়েন্ট  বাংলাদেশ কে  পূর্বে থাকা পূর্ব বাংলা বা তারো পূর্বে  ইন্ডিয়া কোম্পানী হিসাবে নিয়েছে এবং এই তথ্য গুলোই তার কাছে শো করতাছে। 

আরেকবার কথা বলতাছি স্কাইপে চ্যাট করে - একই অবস্থা। আমি যতোবার বলি বাংলাদেশ সে ততোবারই বলে ইন্ডিয়া। তো আমি আরো ডিটেইলস বোঝানোর চেষ্টা করলাম তো বলতাছে আমরা এই এলাকাটা চিনি- এইখানে একজন ইন্ডিয়ান ইন্টারনেটে পৃথিবীর সেকেন্ড স্প্রিডে টাইপ করে থাকে। আমি ওয়ার্ড পার মিনিট জিজ্ঞাসা করলাম- তো বলতাছে ৯০। আমি বললাম তুমি কিভাবে চিনো- তো বলতাছে তার সাথে স্কাইপেতে কন্ট্রাক্ট আছে। এখন বাংলাদেশে কে অনেকেই চিনে। ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইষ্ট ইন্ডিয়া দুই সময়েই বাংলা ভাষা প্রচলিত ছিলো। অন্য কোন দেশের পতাকা দিয়ে বাংলাদেশ এখন আর পরিচিত হয় না- এখন বাংলাদেশের আছে নিজস্ব পতাকা । এখন ইউরোপিয়ান এবং আমেরিকান রা বাংলাদেশ কে যদি কেউ নাও চিনে থাকে তাহলে এই লাল সবুজের পতাকা যা শাহবাগ গনজাগরনের সময় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তার কারনে সারা বিশ্বের মানুষে এখন বাংলাদেশ কে চিনিয়েছে। ২০১৩ সালে অনুষ্টিত শাহবাগ গনজাগরন বিশ্বের প্রত্যেকটা মিডিয়া, ইলেকট্রনিকস মিডিয়া, সংবাদপত্রে এবং সোশাল  মিয়িডাতে দেখানো হয়েছে। একজনের লেখা পড়েছিলাম ফেসবুকে- এই পৃথিবীর যতো গুলো মাটি কনা আছে পানি ছাড়া শুধুমাত্র মাটির জগতে- প্রত্যেকের কানেই  শাহবাগ গনজাগরনের গর্জন গিয়ে পৌছেছে - শুধূ মাত্র কানে যাইয়া পৌছায় নাই শয়তানের প্রজন্মের। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পতাকা তৈরী এবং সেই পতাকা শো ডাউনের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক  অনেক দেশের মানুষেরা এখন বাংলাদেশ কে চিনেছে। আবার সেই সাথে বাংলাদেশ পপুলার হবার পরেও আমাদের দেশের মার্কেটপ্লেসের ফ্রি ল্যান্সার রা পুরোপুরি মেধা সহকারে কাজ না করে কিছু কিছু খারাপ মানের লোক বাজে বাজে কাজ সাপ্লাই দিছে বলে সরাসরি পোষ্টে লিখা থাকতো- বাংলাদেশীরা যেনো কাজের জন্য আবেদন না করে - স্পষ্টত লেখা থাকতো- আমার মতো আরো অনেকেই দেখে থাকবে সেটা এবং মনে মনে কষ্টও পেয়েছে। 

এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্বন্ধে জানা ছিলো অনেক আগে থেকেই। আমিও সাকসেস হবার চেষ্টায় ছিলাম যে কোন এফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়২০০৩ থেকে  এবং  যেদিন থেকে ইন্টারনেটে কাজ শিখি । ২০১১ সালে আমারা ল্যাপটপ হ্যাক হবার পরে একসাথে সব মার্কেটপ্লেসের একাউন্ট হারাইয়া ফেলাইলাম। তারপরে এসইওক্লার্ক মার্কেটপ্লেস নিয়ে কাজ শুরু করি এবং একই সাথে সেটার এফিলিয়েট ও করা শুরু করি। আগে ছিলো অডেস্ক, ইল্যান্স এবং এখনো আছে ফ্রি ল্যান্সার ডট কম, ফিভার ডট কম সহ আরো অনেক মার্কেটপ্লেস এফিলিয়েট সিষ্টেম। আমি সেগুলো প্রমোটের কাজ ও করেছি। এখন শুধু এসইওক্লার্ক(সহ বাকি আরো ৭টি মার্কেটপ্লেস প্রমোটের কাজ করি বিগত ৯ বছর যাবত। এইটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস আমার জানা মোতাবেক। বিড কিনার কোন ঝামেলা নাই। একটাতে রেজিষ্ট্রেশন করলে ৮ টা মার্কেটপ্লেসে রেজিষ্ট্রেশন হয়ে যায় অটোমেটিক। লিষ্টিং সুবিধাও ফ্রি। আনলিমিটেড প্রোডাক্ট রেজিস্ট্রেশন করা যায় বা লিষ্টিং করা যায়। আবার ১ ডলারের সার্ভিস ও কেনা যায়। শুধূ এসইওক্লার্ক রিলেটেড না- সব ধরনের সার্ভিস সেল করা যায়। পেমেন্ট সুবিধা আছে অনেক- পেপাল/পাইওনিয়ার এবং পেল্যূশন। আর প্রেডাক্ট কেনার জন্য আছে পেপাল/ পাইওনিয়ার/বিটকেয়ন (ইথারিয়াম/ লাইটকয়েন) দিয়েও আপনি প্রোডাক্ট কিনতে পারেন। এসইওক্লার্কে এতোদিন কাজ করার পরে যখন নিজের প্রোফাইলে জয় বাংলা রিলেটেড লাল সবুজের পতাকা দেখানো হয় তখন গর্বে বুকটা ভরে উঠে যে আমার ফ্রি ল্যান্সার মার্কেটপ্লেস প্রোফাইলে আমার নামের পাশে /ইউজার নেমের পাশে দেখাইতাছে বাংলাদেশের পতাকা। আপনার কোন ধরনের টাকা খরচ হবে না জয়েন করতে। আপনি শুধু মোবাইল ভেরিফাই করলেই দেখা যাবে আপনার প্রোফাইল ভেরিফায়েড। যে কারো ভেরিফায়েড পেপাল ডট কম একাউন্টে ডলার উইথড্র করতে পারবেন। জানা মোতাবেক মিনিমাম ১০ লক্ষ ফ্রি ল্যান্সার একসাথে কাজ করে এসইওক্লার্ক মার্কেটপ্লেসে কোন আইডি কার্ড নাম্বার লাগবে না আর আপনি যদি এড্রেস ভেরিফাই করে থাকেন তাহলে আপনাকে ৫ বাকস বোনাস দেয়া হইতে পারে। আপনার ইউজার নেম , ফুল নেম আর ইমেইল এড্রেস। এইখানে সরাসরি বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে সুইফট ট্রানজেকশন করা যায় না - সো এইখঅনে আপনাকে কেও অন্য কোন নামে ডাকার সাহস ও পাবে না।

             

প্রথম প্রথম যখন ফ্রি ল্যান্সার রা কাজ শুরু করে তখন এই দেশের অনেক অগ্রপথিক রা বলে দিতো- এইখানে তুমি বাংলাদেশের নামের প্রতিনিধিত্ব করতাছো। সো এমন কিছু করো না যেনো তোমার কারনে বাংলাদেশের নামের অপমান হয় । বাংলার যে পতাকা তা লাল সবুজের পতাকার প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে তুমিও একজন। যেখানে সবুজের মানে হলো সারা বাংলার সবুজ গাছ পালার আলো এবং লাল রং এর মানে হলো ১৯৭১ এর স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্বে যে সকল শহীদেরা জয় বাংলা বলে মৃত্যুবরন করেছে তাদের জমাট বাধা রক্তের ধারা- ‍সবুজ পথে প্রান্তরে  মুক্তিযোদ্বারা নির্ভয়ে অকাতরে তাদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে গেছে- শত্রুর সাতে আপোষ করে নাই। এতো বড় সবুজের মাঝে যতো বাঙালী প্রান হারাইছে তাদের সকলের রক্তকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়ে থাকে গোলাকার রক্ত বৃত্ত। এইখানে এমন কোন দেশের প্রতিনিধিত্ব করার কথা বলা হয় নাই যেখানে ম্যাক্সিমাম সবুজ নাই। 

তো এখন এই সময়কার সমস্ত ফ্রি ল্যান্সার দের প্রতি প্রশ্ন- আপনারা যে অনেকেই আপনার বাবা মায়ের নাম দিয়ে রেমিটেন্স উপার্জন করে যাইতাছেন এতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন খানে /বিভিন্ন ডাটাবেজে আপনার বাবা মা এবং বড় ভাই বোন যাদের ইনফরমেশন ব্যভহার করতাছেন তাদের নাম ব্যবহৃত হইতাছে - ধরেন আজকে আমেরিকাতে যারা যারা আউটিসোর্সিং কোম্পানী এবং যারা যারা ডলার কে ব্যবহার করে পেমেন্ট করে থাকে সেখানে আপনার বাবা বা মায়ের নাম টা প্রকাশিত হলো। সেখানে বসবাসকারী বাঙালীদের মধ্যে কেউ একজন তোমার বাবা বা মায়ের বন্ধু। তো সে হঠাৎ করে কোন একটা নথিতে তোমার বাবা বা মায়ের ইনফরমেশন টুকু দেখে ফেলাইলো। তারপরে মনে মনে চিন্তা করলো- ছোটবেলার দোস্ত আমাকে না বলেই ফ্রি ল্যানসিং শুরু করে দিলো- হয়তো বেশী পরিমান কষ্টে আছে। অথচ আপনার বাবা মা কিন্তু বহাল তবিয়তেই আছে আর আপনি তাদেরকে অপমান করে দিলেণ। তাদের নাম উঠে গেলো দেশের রেমিটেন্সের খাতাতে- আর ভ্যাট ট্যাক্স দিতে গিয়ে শুরু হলো এক জটিলতা- আপনি দেশের নাম ফুটাতে যাইয়া করে দিলেন বাবা মার এক মহা ক্ষতি। আজকে বিডিনিউজ ২৪ এর একটা নিউজ এসেছে যেখানে স্পষ্টত বলা আছে যে- আপনি যদি আইডি কার্ডের নাম্বার মিসইউজ করে থাকেন তাহলে আপনার ভয়াবহ সাজা হতে পারে। খবরটি আপনি দেখতে পারেন এইখানে- বিডিনিউজ ২৪


সো আমি মনে করি আপনার যদি বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে তাহলে আপনি পরে শুরু করেন ফ্রি ল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং। অথবা আপনি শুধু ইন্টারনেটে ব্যাংকিং ব্যবহার করতে পারেন। কারন আপনি যদি অণ্য কারো জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ফ্রি ল্যান্সার মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করেন আর সেই এনআইডি নাম্বার দিয়ে যদি আপনি রেমিটেন্স জেনারেট করেন তাহলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী আপনি ঝামেলাতে পড়ে যাইতে পারেন কারন বাস্তব জীবনে আপনার বাবা মা বা যারা এনআই ডি কার্ড নাম্বার আপনি ব্যবহার করেছন -আবার তাদের নামে রেমিটেন্স এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবার সেই একই ব্যাংকে আপনারা বাবা মা নিয়মিত ভ্যাট ট্যাক্স আয় কর, রিটান দিতে যাইয়া জরিমানায় পড়ে যাইতে পারে তাতে আপনি যা উপার্জন করতাছেন তার চেয়ে বেশী ক্ষতিও হইতে পারে। বর্তমানের ডিজিটাল বাংলাদেশের সমস্ত তথ্যই এক ক্লিকে বের করে ফেলাইতে পারেন রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগন। রিসেন্টলি দেখলাম এক আইন ও হয়েছে- বাংলাদেশ দন্ডবিধিতে ৪২০ ধারাতে সাত বছরের সশ্রম জেল এবং কারা দন্ড যদি আপনি বৈধ অনুমতি ছাড়া  অনলাইনে কারো কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে থাকেন। এখন আপনি নিজেই ভেবে দেখেন আপনি কতো বড় ঝামেলা তৈরী করতাছেণ আপনার প্রাত্যহিক জীবনে? তাই আসুন পারলে দেশের সুনাম রক্ষা করি আর না পারলে মার্কেটপ্লেসে কাজ অফ করে দেই। 

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment. After review it will be publish on our website.

#masudbcl